ওঙ্কার

অসংলগ্নতার ডায়েরি – এম জে ফেরদৌস

Post Views13 Total Count
0Shares
এম জে ফেরদৌস

অসংলগ্নতার ডায়েরি (এক)

এক.

এপ্রিল ১৮, ২০১৩

শৈশবে ছেলেধরার ভয় দেখিয়ে দুপুরে ঘুম পারাতো মা। গ্রাম ও মফস্বলে ছেলেধরা আতঙ্কে মায়েরা তটস্ত থাকতো কখন তার জাদু-মানিক ছেলেধরার বিশাল ঝোলায় হারিয়ে যায়।

সে কি আতঙ্ক! কোথাও কোনো নতুন ব্রিজ,পাকা সড়ক নির্মিত হচ্ছে শুনলে আমার মা ভয়ে কাঁপতো। কখন যে তার কালাচাঁদ হারিয়ে যাবে কোন অচেনা রহস্যময় ছেলেধরার কবলে পড়ে।

মনে আছে অসময়েই যখন রবি ঠাকুরের ‘কাবুলিওয়ালা’ পড়ি, ভেতরে ভেতরে ভয়ে কেঁপে উঠেছিলাম। রহস্যে ঘেরা কাবুল থেকে আসা লোকটার চেহারায় কেন জানি ছেলেধরার প্রতিরূপ দেখেছিলাম।

অল্প বয়সে না বুঝেই স্নেহ-বাৎসল্যময় কাবুলিওয়ালার মায়াময় মুখখানিতে আতঙ্ক জেগেছিলো চারপাশের অতিরঞ্জন মাখা ছেলেধরার বিভীষিকাময় বর্ণনার আতিশয্যে।

আজো আমার ছেলেধরার ভয় কাটে না। আজো আধো ঘুম-জাগরণে কেবলি মনে হয়- কখন যে তলিয়ে যাই ছেলেধরার অন্ধকার ঝোলার অতলে!

ইলিয়াস আলী- বুড়ো ছেলেটার হারিয়ে যাওয়ার বছর পেরুলো। আমার মা আর আতঙ্কিত হয় না। আর নেই সেই ছেলেধরার দল। নগর-গঞ্জের পথে ঝোলাওয়ালা লোক দেখলে মুষ্টিভিক্ষা দেয় মা। মা জানে না এই রাষ্ট্র এক বড় ছেলেধরা। তার পেটের অতলে হারিয়ে যায় প্রতিদিন কত কত ইলিয়াস আলী।

আমার ক্রমেই বয়স বাড়ে, সঙ্গে বাড়ে আতঙ্ক। এই ‘ছেলেধরা রাষ্ট্র’ কখন কোথায় কাকে যে তার ঝোলার তলায় থাকা নিশুতি আঁধারে তলিয়ে দেবে; সে খবর মা, তুমি কি জানো?


দুই.

মে ০৮, ২০১৩

বেদম পিটুনিতে শহর দেখা দুই চোখে অপার বিস্ময়! আর ভীতিগ্রস্ত হয়ে প্রহারকারীকেই সজোরে জড়িয়ে ধরছে। কি আশ্চর্য! প্রহাররত পোশাকধারীর কোলে পিতার স্নেহ আর আশ্রয় ভিক্ষা চাইছে ব্যথায় কাঁপতে থাকা শিশুটি।

রেহাই মেলেনি। নির্বোধ, রাষ্ট্র কারো পিতা নয়। রাষ্ট্র মানেই খুনে চরিত্র-নির্মম ঘাতক।

তবে কথা ভিন্ন; পালানোর পথটুকুও না চেনা নাদান শিশুকে যে গুলির মুখে রেখে যায়, সেও সম্পূরকভাবেই খুনি। গুলি করা আর গুলির মুখে ঢেলে দেওয়া সমান দায়িত্ববোধের পরিচয় বহন করে। হেফাজতের এই তো মূরতি; বিরোধী ভিক্ষের থালায় কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ লাশের যোগান!

মোমিন, এ যুদ্ধে তুই ছাড়া সবাই জয়ী।

মে ০৬, ২০১৩    

বাংলাদেশের ইতিহাস লেখা হয় ব্লাকবোর্ডে। না মুছে নতুন কিছু যায় না লেখা কালের দেয়ালে। এক একটা গণহত্যা মুছে দেয় পূর্বতন হত্যাযজ্ঞের রেখা। নিশ্চিন্তপুরের আগুন নিভে যায় ধ্বংসস্তূপের কংক্রিটে। ছিন্ন হাত, পা, নাক-মুখ ডুবে যায় শাপলাঝিলের রক্তোৎসারণে। হত্যার পর হত্যা,খুন-গুম, আমার চোখ জুড়ে ঘুম… আর শরীরময় রক্তকালো ছোপ ছোপ দাগ—

এ আমার কালের ইতিহাস।

এই পাষাণ শহর চেনো না তুমি, কানাগলিতে আটকে কাঁদো অসহায়! দিশেহারা, তটস্থ;বাড়ি যাবা? কোন পথে সায়েদাবাদ-মহাখালি? যে তুমি পথ চেন না, শহরে আসো ভুল ইশারায়। কার জন্য, কী হেফাজত করতে আসছিলা? নিজের পরাণটারে হেফাজতের উপায় জানো? তোমারে যুদ্ধে নামায় কে? কার ঘরে জ্বলে আগুন, তা তোমারেও চিনতে হবে।

মে ০৫, ২০১৩

ধ্বংসস্তূপ গবেষণায় বিশেষজ্ঞ, নীলকুঠি-ভব্যগণ, মালিক-মহাশয়দের অবস্থান দারুণভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ। তারা রানাকে দেখিয়েই এ যাত্রাতেও মহাশয়দের আড়াল করছেন। রানা-মুরাদ যুক্ততার ছুতোয়, নির্বাচনী ফায়দা তুলতে লালা ঝরা রঙিন চাদর বিছানো।

মিডিয়ার সেন্টিমেন্ট-সুবাস বেচা শেষ। এবার শীতনিদ্রায় যাও। আবার কোথাও আগুন লাগার অপেক্ষায় থাকো।

মে ০৩, ২০১৩    

ভালো না? ভালো তো! হাজার খানেক শ্রমিকের নিখোঁজ হওয়া, হাজারের মৃত্যূ আর হাজারের পঙ্গুত্বের বিনিময়ে একটা বেশ খুশি খুশি মাই-ডিয়ার সংলাপের বাতাবরণ। অথর্ব মধ্যবিত্ত আর লোমোৎপাটন করা বুদ্ধিজীবীরা সংলাপ-সম্ভাবনায় খুশিতে ডগমগ। যেন এই সংলাপের পরপরই আমাদের সকল জাতীয় সমস্যা কমোডের ফ্ল্যাশের সঙ্গে অনায়াসেই ভেসে যাবে। রক্তের ক্ষতগুলোর উপর ফুটে উঠবে আশার ফুল। বাহ! ভালো না? ভালো তো!


তিন.

৫ জুলাই, ২০১৩

ভীষণভাবে কথা বলার প্রয়োজন বোধ করছি। যেভাবে দিনযাপন করি তাতে বাক্যব্যয় হয়, তবে কথা বলা হয়ে ওঠে না। যেমন মধ্যরাতের আগে ঘরে ফেরা হয় না। কাজে বা অকাজে, শ্রমে বা আলস্যে সময় পেরিয়ে যায়। সারারাত জাগি, দিনের আধেকটা অপচয় করে চোখ ডলতে ডলতে কাজে যাই।

—এর ভিতরে এক ফাঁকি আছে, রয়েছে নিজেকে প্রবোধ দেওয়া সান্ত্বনা। ঘরের ছায়া অসহ্য ঢেকে। কখনও কখনও রৌদ্রতাপ, শীতল বৃষ্টি, তুষারের হিম; ঘরের শান্ত-নীরব ক্লান্তির চেয়েও বেশি আরামদায়ক বোধ হয়। পালিয়ে বেড়াই, ঘরের ছায়ায় নেমে আসে দুঃসহ স্মৃতি।

ঘরের চেয়ে বাহির বড় আপন। যদিও মানুষ সহজ নয়।

কোনো কথাই যুতসই নয়, টাইমিং মিলে না, ভুল পাসে বেদখল বল। নিজের ডাকঘর, বারপোস্ট কিছুই চিনি না। দিনমান সাইবার ডেস্ক, অফিসের করিডোর-ক্যান্টিন আর পথের মোড়ের সামাজিকতায় বিকিয়ে দেওয়া। খুব কদাচিৎ বন্ধুসঙ্গ, সভাসংঘ।

কথা বলার জন্য দুটো দিন পাওয়া গেল। আগামীর দুটি দিন, ছুটি মঞ্জুর। সম্পূর্ণ বেচে দেওয়া দুটি আ্স্ত দুপুর ফিরে পেলাম। আর শুরুর দিনেই অজয়-স্বপ্নার বিয়ে। অজয়ের স্বপ্নপূরণ নাকি স্বপ্নার অজেয়কে জয়! কাল বিয়ে খেতে যাচ্ছি। মন ভারি খুশি!

এম জে ফেরদেৌস
এম জে ফেরদৌস
গল্পকার। ফটোক্লিক : তাসলিমা আখ‌্তার

বিভাগ

কবিতা

error: Content is protected !!
We use cookies to personalise content and ads, to provide social media features and to analyse our traffic. We also share information about your use of our site with our social media, advertising and analytics partners. View more
Cookies settings
Accept
Privacy & Cookie policy
Privacy & Cookies policy
Cookie name Active

🍪 We Use Cookies

Our website uses cookies to improve your experience. They help us remember your preferences and analyze traffic. Some cookies are essential, while others help us optimize content. By continuing to browse, you agree to our use of cookies. You can manage cookie settings in your browser.

Save settings
Cookies settings
Scroll to Top